Wednesday, April 5, 2017

সনাতন ধর্মে মৃতদেহ দাহ করার তিনটি কারন আছে।


(১) আধ্যাত্মিক কারণঃ আমরা সনাতন ধর্মের অনুসারিরা পুনর্জন্মে বিশ্বাসী। এই ত্রিতাপদগ্ধ সংসারে পুনরায় জন্মগ্রহন করে মানুষ দুঃখজ্বালা ভোগ করুক এটা কেউ চাই না। যে দেহে তিনি এতদিন বাস করেছেন, তাকে সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছেন, পৃথিবীর যাবতীয় সুখের স্বাদ তাকে দিয়েছেন সে দেহের প্রতি আকর্ষণ ও মায়া থাকা স্বাভাবিক। দেহের প্রতি আকর্ষণে পুনঃ দেহ ধারনে তার আকাঙ্ক্ষা জাগতে পারে, ঐ আকাঙ্ক্ষা দূর করার উদ্দেশেই আকর্ষণের বস্তু দেহটিকে পোড়ানো হয়।

(২) সামাজিক কারণঃ আর্য ঋষিদের ভবিষ্যৎ চিন্তা এতে প্রতিফলিত হয়েছে। মানুষ সৃষ্টি হবে এবং এমন একদিন আসতে পারে যখন স্থানাভাব দেখা দেবে। মানুষের দেহ না পুড়িয়ে মাটিতে পুঁতে রেখে দিলে ক্রমশ মাটিতে রাখার জায়গার অভাব দেখা দিতে পারে। এই কারনেই দেহ পোড়াবার বাবস্থা।
(৩) বৈজ্ঞানিক কারণঃ মানুষ বিভিন্ন কারনে মৃত্যুবরণ করে। এর মধ্য রোগে মৃত্যুই সর্বাধিক। এই সকল মৃতদেহে পচন ধরলে পরিবেশে বিভিন্ন রোগ জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। এসব চিন্তা থেকেই আর্য ঋষিগণ শব পোড়াবার বিধি দিয়েছে।
মুখাগ্নি করার কারণঃ
আমরা সনাতন ধর্মের অনুসারি বিশ্বাস করি যে, মানুষ মৃত্যুর পর স্বর্গবাসী হয় অর্থাৎ দেবলোকে যায়। কিন্তু, তিনি স্বর্গে বা দেবলোকে যাবেন কিভাবে? বৈদিক নিয়ম অনুসারে দেবলোকে বা স্বর্গলোকে পাঠাতে হলে দেবতাদের পুরোহিত অগ্নিতে আহুতি দিতে হয়। অগ্নিদেবই সে অর্চনা বা আহুতি দেবলোকে নিয়ে যান। তাই যিনি মৃত্যুবরণ করেছেন তার প্রাণবায়ু অগ্নিদেবকে আহুতি না দিলে তিনি কি করে স্বর্গবাসী হবেন? প্রানবায়ু মুখ দিয়ে বের হয় বলে মুখে অগ্নি সংযোগ করে মন্ত্র পাঠ করতে হয়-
“ওঁ কৃত্বা তু দুষ্কৃতং কর্মং জানতা বাপ্য জানতা ।
মৃত্যুকাল বশং প্রাপ্য নরং পঞ্চত্বমাগতম্
ধর্মাধর্ম সমাযুক্তং লোভ মোহ সমাবৃতম্
দহেয়ং সর্বগাত্রানি দিব্যান্ লোকান্ স গচ্ছতু”
অনুবাদঃ তিনি জেনে বা না জেনে অনেক দুষ্কর্ম করে থাকতে পারেন। কালবশে মানুষ মৃত্যুবরণ করে থাকে। এ দেহ ধর্ম, অধর্ম, লোভ, মোহ প্রভৃতি দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল। হে অগ্নিদেব, আপনি তার সকল দেহ দগ্ধ করে দিব্যলোকে নিয়ে যান।

No comments:

Post a Comment